জীবন সত্যিই এক বিশাল রহস্যের জায়গা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও দীর্ঘদিন বেকারত্বের হতাশায় নিমজ্জিত থাকে অনেকেই, এরপর বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর নিতান্ত অল্প বেতনে একটি কাজ খুঁজে পান। এ যেন সেই রহস্যের এক করুণ চিত্র। ৮০০০ -১০০০০ হাজার টাকার বেতন হয়তো জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়, কিন্তু যখন বয়স শেষের দিকে, তখন পদের মর্যাদা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে একটি সামান্য চাকরিও যেন এক দুর্লভ আশীর্বাদ।
এই পরিস্থিতিতে, পদবী মুখ্য নয়, চাকরিটাই যেন শেষ আশ্রয়। হয়তো কোম্পানিও বয়সের ভারে নুয়ে পড়া একটি জীবনকে করুণা করে সুযোগ দিয়েছে, যেখানে উন্নতির আর কোনো স্বপ্ন নেই, নেই নতুন দক্ষতা অর্জনের তাগিদ। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি না পেলে কোম্পানির উপর ক্ষোভ আসবে , তখন শুধু কোম্পানির দোষ বলেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। অনেক ছাত্র ছাত্রী পাস করে জব খুঁজে, আর কোম্পানির লোকজন ক্যান্ডিডেট খুঁজে। সরকারের উচিৎ সুন্দর একটা বেতন কাঠামো ও ইন্ড্রাস্টির সাথে সমন্বয় করা।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন একেকটি স্বপ্ন তৈরির কারখানা, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০-৬০টি করে বিভাগ, অথচ কোনো বিভাগেরই যেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই । প্রতি বছর পাস করা শত শত শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থানের কী হবে? কতজন বেকারত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াবে? কীভাবে পরবর্তী ব্যাচগুলোকে শতভাগ চাকরির উপযোগী করে তোলা যায়, সে বিষয়ে যেন কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিত্র যদি হয়, তবে একবার ভাবুন, যারা ডিপ্লোমা করছে কিংবা নিজ জেলা শহরে কোনো কলেজ থেকে পাস করছে, তাদের ভবিষ্যৎ কতটা অনিশ্চিত হতে পারে! কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী তাদের জীবনের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো কেবল স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে, বাস্তবতার কঠিন চেয়ারে বসে কোন প্লানই ঠিক মত পালন করতে পারছে না।
কেউ হয়তো স্বল্প বেতনের কারণে অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধ কেনার সামর্থ্য রাখে না, আবার কেউ হয়তো ভালোবাসার মানুষটিকে দাম্পত্যের বন্ধনে বাঁধার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আর্থিক অভাবের কারণে তা পূরণ করতে পারে না। জীবনের এই অদ্ভুত সমীকরণগুলো একদিকে যেমন বেদনাদায়ক, তেমনই অন্যদিকে সমাজের কাঠামোগত দুর্বলতাকেও স্পষ্ট করে তোলে।
এই পরিস্থিতিতে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি কেবল সনদ বিতরণের কারখানায় পরিণত হয়েছে? যেখানে জ্ঞানের আলো হয়তো পৌঁছে, কিন্তু সেই জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের প্রয়োজনে কাজে লাগানোর কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচিত মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী তাদের শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজানো, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা করা।
যদি এই তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের কোনো সুস্পষ্ট পথ না থাকে, যদি তাদের জীবনের হিসাব মেলানোর কোনো সুযোগ তৈরি না হয়, তবে এই বিশাল অদ্ভুত জীবন হয়তো কেবল দীর্ঘশ্বাসের গল্প হয়েই থেকে যাবে। প্রয়োজন একটি সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার এবং শিল্প খাত একসাথে কাজ করে এই তরুণদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে। নতুবা, এই অদ্ভুত জীবনের গোলক ধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য স্বপ্ন কেবল নীরব কান্নাই করতে থাকবে।
সাথে জীবনের মিল অমিল আজও অপূর্ণ রয়েই যাচ্ছে।
সাথে জীবনের মিল অমিল আজও অপূর্ণ রয়েই যাচ্ছে।